Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
ইসলাম যে সব অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তার অন্যতম হলো- ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ও এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের (হক) অধিকার।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ।যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই জালিম।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত-১১)
মহান আল্লাহ আরো বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম করুনাময়। (সুরা হুজুরাত, আয়াত-১২)
মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য ‘ইসলাম’একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত জীবনাদর্শ। আমাদের উচিত অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধকে অব্যাহত রাখা। এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা।
অন্য হাদিসে রাসূল (সা) এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা করেছেন।
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ
এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন-
(১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে।
(২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
(৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে,তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
(৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
(৫) যখন সে অসুস্থ হবে,তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) এবং যখন সে মারা যাবে,তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে। (মুসলিম, হা:- ৫৭৭৮)
মুসলমানের পরস্পরের ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের আরেকটি কার্যকরী মাধ্যম হলো, তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। যেমন-
হাদীসে এসেছে- গোটা মুসলিম জাতি একটি শরীরের মত, যখন শরীরের একটি অঙ্গ ব্যথিত হয় তখন পুরো শরীর সে ব্যাথা অনুভব করে।
পরিশেষে…..
মুসলমান হিসেবে আমরা উপরিউক্ত অধিকারগুলো আদায় করার মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হবো। তাই আমরা ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এই অধিকারগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
লিখেছেন:- মুহতারামা ফাতেমা হাসান নিশি (শিক্ষার্থী, বিবিএ- নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারী কলেজ লাকসাম, কুমিল্লা)