Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয়, যা একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও শোষণের প্রতিক্রিয়া ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি গভীর সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল জনসংখ্যার দিক থেকে বেশি, কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বৈষম্যের শিকার হয় এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকারও খর্ব হয়।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান “ছয় দফা” দাবি উপস্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি প্রাথমিক রূপরেখা। এই দাবি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর প্রতি বিরোধিতার এক নতুন ধারার সূচনা করে। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬০টির বেশি আসন জিতে নিয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান সরকার তাদের ক্ষমতা অস্বীকার করে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে এবং ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” নামে একটি বর্বর অভিযান শুরু করে, যা শুরু হয় নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও ধরপাকড়ের মাধ্যমে। এর ফলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে।
২৬শে মার্চ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ জনগণের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন দেশের সমর্থন পায় বাংলাদেশ। ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করে। ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কেবল একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম ছিল না, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলন ছিল। দেশের মানুষের মধ্যে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ একটি নতুন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যার নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস রয়েছে।
আজকের বাংলাদেশ স্বাধীনতার সোঁতানা ধরে রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে। দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগ্রাম আজও চলমান। স্বাধীনতা অর্জনের পর, বাংলাদেশ তার গর্বিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
আল আমিন সানি (সম্পাদক- বাংলা নলেজ)